প্রকাশিতঃ শুক্রবার, আগস্ট ২, ২০১৯ পঠিতঃ 94311
রাফা লেখাপড়া শেষ করা একজন বেকার অবিবাহিত খুবই সুদর্শন যুবক। নানা ভাবে চাকরির জন্য চেষ্টা করেছে কিন্তু মামা এবং ঘুষের টাকা না থাকায় বেকার জীবন কাটাচ্ছে। এরই মধ্যে বন্ধু জিহাদের বিয়ের দাওয়াত পেলো। জিহাদ রাফার ভার্সিটির বন্ধু। টানা ৩ দিন থাকতে হবে। জিহাদদের অবস্থা খুবই ভালো, সম্ভ্রান্ত পরিবার। তাই সব থেকে ভালো জামাকাপড় নিয়ে গায়ে হলুদের দিন সকালের দিকেই বেরিয়ে পরলো। পৌছাতে বিকেল হয়ে গেলো। ভার্সিটির অনেক বন্ধুই এসেছে জিহাদের বিয়েতে। বিশাল আয়োজনে ধুমধাম করে বিয়ের অনুষ্ঠান করা হচ্ছে। প্রথম দিন থেকেই জিহাদের খালাতো বোন রিতুর নজর ছিলো রাফার দিকে, বিষয়টা চোখে পরার মতো। এটা যে শুধু রাফাই লক্ষ্য করে তা না, অনেকেই খেয়াল করেছে। রীতিমতো রাফার বন্ধু আর রিতুর বান্ধবীদের মধ্যে কানাকানিও হচ্ছে এ নিয়ে। রিতুর বাবা একটা প্রাইভেট কম্পানিতে উচ্চ পদে চাকরি করে। ঢাকায় নিজেস্ব গাড়ি-বাড়ি সব আছে। রিতুও দেখতে বেশ সুন্দরী। কিন্তু রাফার রিতুর দিকে কোনই আগ্রহ নেই, কারণ রাফার প্রেমিকা আছে। যেকিনা রাফার বেকার সময়েও ছেড়ে যাচ্ছে না উলটা বিভিন্নভাবে রাফাকে সাহায্য করছে। যাইহোক দেখতে দেখতে বিয়ের ৩ দিনের অনুষ্ঠান প্রায় শেষ। সন্ধ্যায় বাড়ি ফিরবে রাফা, বিকেলের দিকে হঠাৎ আলাদা নিরিবিলি একটা জায়গায় রিতুর বাবা ডেকে নিয়ে যায় রাফাকে সাথে রিতুর মাও ছিলো। রাফা মনে মনে লজ্জা এবং সম্মানের ভয়ও পায়। কিন্তু রিতুর বাবা যা বলে তার জন্য রাফ কোন ভাবেই প্রস্তুত ছিলো না।
- তোমার নাম কি..?
- আমার নাম শাহরিয়ার আহম্মেদ রাফা।
- কি করো..?
- এক বছর আগে মাস্টার্স শেষ করেছি কিন্তু এখনো চাকরি পাইনি। তাই আপাতত বেকার।
- আচ্ছা..! তুমি আধুনিক যুগের ছেলে তাই যা বলার সরাসরিই বলি। আমি হচ্ছি রিতুর বাবা আর উনি রিতুর মা। মা-বাবার চোখ সন্তান কখনোই ফাঁকি দিতে পারে না। রিতু আমার একমাত্র মেয়ে ওর কোন ইচ্ছাই আমি অপূর্ণ রাখি নাই। এই তিনদিনে আমাদের যা মনে হলো রিতু মনে হয় তোমাকে পছন্দ করে। তুমি যদি রাজি থাকো তাহলে আমি এর সুন্দর শেষ দেখতে চাই।
- কিন্তু আঙ্কেল আমি তো...
- তুমি কোনই চিন্তা করো না। তোমার চাকরির বিষয়টা আমি দেখবো।
- আঙ্কেল, রিতু কি বলে..?
- রিতুর সাথে আমাদের এখনো এই বিষয়ে কথা হয় নাই।
- তাহলে আমি কি রিতুর সাথে একটু কথা বলতে পারি।
- অবশ্যই, যাও।
রাফা রিতুলে ডেকে একটু আলাদা নিরিবিলিতে নিয়ে জিজ্ঞাসা করলো।
- দেখুন, আপনার সাথে এই প্রথম কথা বলা আমার। আপনার বাবা-মা আমার সাথে মাত্রই কথা বলেছেন। আপনি কি দেখেছে..?
- হ্যা, আমি দেখেছি।
- কি বিষয়ে কথা বলেছেন সেটা জানেন কি..?
- না, আমি কিছুই জানি না।
- আচ্ছা পরে বলছি।। আপনার কি কারো সাথে প্রেমের সম্পর্ক আছে..? সত্য করে বলবেন লুকাবেন না প্লিজ।
- হ্যা আছে, আমার ভার্সিটির বন্ধু।
- আপনি তো অবশ্যই তাকে বিয়ে করতে চান।
- হ্যা চাই।
- তাহলে আমার কথাটা একটু মন দিয়ে শুনুন। আপনার বাবা চান, আপনার সাথে আমার বিয়ে হোক। আর বিয়ে হলে তিনি আমাকে একটা চাকরিও দিবেন বলেছেন।
- এতে আমি করতে পারি।
- আমার কথাটা ভালো করে শুনুন প্লিজ। দেখুন আমি বেকার, একটা চাকরির খুব প্রয়োজন। আমি রাজি হবো এবং এটাও বলবো, আমি নিজের খরচে বিয়ে করতে চাই। তাই অন্তত ২ মাস চাকরি জীবনের পর বিয়ে করবো। দুই মাস পরে আপনি বলবেন, আমাকে আপনি বিয়ে করতে রাজি না। তখন আর তিনি আমাকে চাকরি থেকে বের করে দিবেন না।। প্লিজ, আমার জন্য এই উপকারটুকো করেন। এতে আপনার এবং আপনার পরিবারের কোনই ক্ষতি হবে না।। বরং আমার অনেক বড় উপকার হবে।
- আচ্ছা, ঠিক আছে তাই হবে।
রাফা তো মহা খুশি। রিতুর বাবা একটা ভালো চাকরি দেয় রাফাকে। রাফা-রিতু মাঝে মাঝে দেখা করে কফি হাউজে বাবাকে বুঝাতে যে তাদের মধ্যে খুব যোগাযোগ হচ্ছে।। ইত্যাদি ইত্যাদি।। সব কিছু ঠিকঠাক চলছে। চাকরির বয়স ২ মাস হয়ে গেছে। শেষের দিকে রিতুর আগ্রহও একটু বেশিই দেখা করার জন্য এ দিকে রিতুর বাবাও এক দিন হঠাৎ বললেন।
- রাফা, অনেকদিন হলো এখন অনুষ্ঠানের আয়োজন করি।
- রিতু কিছু বলেছে আঙ্কেল..?
- নতুন করে আর জিজ্ঞাসার কি আছে।। আমরা তো সব দেখছিই তাই না.??
- তারপরও.
- আচ্ছা।
ঐদিন বিকেলে রাফা রিতুকে কফি হাউজে ডাকে। রাফা রিতুকে শর্তের কথা মনে করিয়ে দিয়ে সেই কথাটা বলতে বলে। কিন্তু রিতু শোনায় ভিন্ন কথা।
- আমার কোন বিএফ নাই। আমি আপনাকেই পছন্দ করি। আমি আপনাকেই বিয়ে করতে চাই।
- এটা সম্ভব না আমার প্রেমিকা আছে। যে আমার অপেক্ষায় আছে। সামনে মাসে আমরা বিয়ে করবো।
- প্লিজ,, আমি তোমাকেই বিয়ে করতে চাই। আমার কিচ্ছু শুনতে চাই না।।
রাফা বুঝতে পারে তার পাতানো জালে সে নিজেই ধরা পরেছে। তাই রিতুর বাবার অপমান থেকে বাঁচাতে সেই রাতেই ঢাকা থেকে গ্রামে ফিরে আসে সেই বেকার জীবন নিয়ে।।।
এরপর আর যোগাযোগ করে নাই রাফা। রিতু যোগাযোগের চেষ্টা করেছে তবে তা ছিলো শুধুই বিয়ের জন্য।।
এরপর রাফা সিমকার্ড পাল্টেন নতুন করে চাকরি খোঁজা শুরু করে...
ইসরাফিল হোসেন / ইসরাফিল হোসেন