প্রকাশিতঃ বুধবার, জুন ২২, ২০২২ পঠিতঃ 10584
ছামিনা বেগমের (৪৫) স্বামী মারা গেছেন সাত বছর আগে। অন্যের বাড়িতে কাজ করে পেটে ভাত জোটে। কাজ না থাকলে সেদিন অর্ধাহারে বা অনাহারে থাকতে হয়। একে তো দুঃখ-কষ্টের জীবন, তার ওপর বন্যায় পরিবার নিয়ে চরম দুর্ভোগে পড়েন তিনি। কী করবেন, কোথায় যাবেন, ভেবে কূল পান না।
বানের পানিতে ঘর থেকে বের হতে পারেন না ছামিনা। বাড়ির চারদিকে থইথই পানি। নিজের নৌকা তো নেই, নেই একটা কলাগাছের ভেলাও। তাই দিনমজুরের কাজেও যেতে পারছেন না।
এই কঠিন সময়ে এতিম তিন নাতি জোবাইদুল (৩), মামুন (১৩) ও জাহাঙ্গীর (৫) এবং এক ছেলে ছামিদুল (১৬) ও এক মেয়ে আল্পনাকে (১৪) নিয়ে চরম বিপদে পড়েছেন ছামিনা। বন্যার কারণে কাজ করতে না পারায় এক বেলা খেয়ে বা না খেয়েও দিন পার করতে হয় ছয় সদস্যকে।
ছামিনা কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার পাঁচগাছী ইউনিয়নের মরছিয়াল পাড়া এলাকার মৃত আজগার আলীর স্ত্রী। এই বন্যায় শুধু ছামিনা নন, তার মতো শত শত খেটে খাওয়া ও দিনমজুর মানুষজন পরেছেন মহাবিপাকে।
ছামিনা বেগম বলেন, বাড়ি থেকে বাহির হতে পারছি না। কাজকর্মও নাই। কারও বাড়ি যে যাব, তারও সুযোগ নাই। এক বেলা ভাত জোটে তো তরকারি নাই। হাতে একটি টাকাও নাই। বাজার করব কীভাবে? খেয়ে না খেয়ে কোনো রকম দিন পার করছি। নিজে ক্ষুধার জ্বালা সহ্য করতে পারলেও বাচ্চাগুলোর খাবারের কষ্ট সহ্য করতে পারি না। এই ভরা বন্যায় কাজের জন্য কোথাও যেতে পারি না বাচ্চাদের একা রেখে। যদি কোনো অঘটন ঘটে যায়? গত দেড় বছর থেকে মা-হারা তিন সন্তানকে মানুষ করছি। তাদের মা ক্যানসারে মারা গেছে। বাবা থেকেও নেই তাদের।
ছামিনার ছেলে ছামিদুল বলেন, আমি ঢাকায় কাজ করতাম। বন্যার কারণে যেতে পারছি না। বন্যার কারণে এখানে কাজও নাই। বাড়িতে আবার খাবারও নাই। খুব বিপদে আছি আমরা। আমরা খাই না খাই, ছোট তিনটা ভাগিনাকে নিয়ে খুব সমস্যায় আছি।
এদিকে ব্রহ্মপুত্র ও ধরলার পানি বিপৎসীমার ওপর কিছুটা স্থিতিশীল অবস্থায় থাকায় জেলার সার্বিক বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত রয়েছে। বন্যার পানি স্থায়ী হওয়ায় দুর্ভোগ বেড়েই চলেছে বানভাসিদের। এ অবস্থায় সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েছেন চরাঞ্চল ও নিম্নাঞ্চলের খেটে খাওয়া দিনমজুররা। বিশুদ্ধ খাবার পানি ও শুকনো খাবারের সংকটে পড়েছেন তারা। বন্যাকবলিত এলাকায় তীব্র হয়ে উঠেছে গবাদিপশুর খাদ্য-সংকটও।
এদিকে সরকারি-বেসরকারিভাবে ত্রাণতৎপরতা শুরু হলেও তা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল। ত্রাণসহায়তা না পাওয়ার অভিযোগ রয়েছে অনেকেরই।
সদর উপজেলার পাঁচগাছী ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মো. আব্দুল বাতেন সরকার বলেন, সরকারিভাবে আমার ইউনিয়নের জন্য চার টন চাল পেয়েছি। তা আজ ১০ কেজি করে বিতরণ করা হয়েছে। যা প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম। অনেক বানভাসি মানুষকে দেওয়া সম্ভব হয়নি।
কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল্ল্যাহ আল মামুন জানান, ব্রহ্মপুত্র ও ধরলার পানি বিপৎসীমার ওপর কিছুটা স্থিতিশীল অবস্থায় রয়েছে। বন্যার পানি ধীরগতিতে কমতে শুরু করেছে বলে জানান তিনি।
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রেজাউল করিম জানান, ৯ উপজেলার বন্যাকবলিত মানুষের জন্য ৩৩৮ মেট্রিক টন চাল, নগদ ১৬ লাখ ৫০ হাজার টাকা, ১ হাজার প্যাকেট শুকনো খাবার, ১৮ লাখ ৯৫ হাজার টাকার শিশুখাদ্য ও ১৭ লাখ ৭৫ হাজার টাকা গোখাদ্য বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। যা বিতরণ কার্যক্রম চলমান রয়েছে।
ইসরাফিল হোসেন / ইসরাফিল হোসেন